ইসলামে মানুষের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তাআলা এবং তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তাই মুসলিম সমাজে একে অপরকে অসম্মান করা, অপবাদ দেওয়া কিংবা পরস্পরের অন্তরালে কথা বলা, যা ‘গিবত’ বা পিঠে ছুরি মারার সমান, তা অত্যন্ত মারাত্মক গোনাহ হিসেবে গণ্য হয়।
গিবত কী ?
গিবত হচ্ছে এমন কোনো কথা বলা যা আপনার ভাই বা বোন সম্পর্কে অন্যের কাছে বলা, কিন্তু ওই ব্যক্তি আপনার সামনে উপস্থিত নয়। আর এটি যদি সত্য হয়, তবে তা গিবত হিসেবে গণ্য হবে। আর যদি তা মিথ্যা হয়, তবে সেটি হবে ‘বুত্তানাহ’ (অপবাদ) এবং এর শাস্তি আরও কঠিন।
কুরআনের অন্যান্য আয়াত
পরনিন্দার বিষয়ে আল্লাহ তাআলা কুরআনে আরও বলেছেন:
“হে মুমিনগণ! তোমরা কেউ পরনিন্দা করো না। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? নিশ্চয়ই তোমরা তা ঘৃণা করবে। অতএব, আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।“
(সূরা আল-হুজুরাত: ১২)
এ আয়াতটি স্পষ্টভাবে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেয় যে, অন্যের পেছনে খারাপ কথা বলা, সমালোচনা করা বা বদনাম করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এই ধরনের আচরণ যেমন একটি অপরাধ, তেমনি এটি সমাজে অশান্তি, বিভেদ এবং ঝগড়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই আমাদেরকে গিবত থেকে দূরে থাকতে হবে এবং অন্যের সম্পর্কে ভালো কথা বলতে হবে।
“মুমিনগণ! কোনো সম্প্রদায় যেন অপর সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারা (যাদের বিদ্রূপ করা হচ্ছে) তাদের চেয়ে উত্তম। এবং নারীরা যেন অন্য নারীদের বিদ্রূপ না করে। হতে পারে তারা (বিদ্রূপের শিকার নারীরা) তাদের চেয়ে উত্তম। আর নিজেদের মধ্যে দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পরে মন্দ নামে ডাকা পাপ। যারা তাওবা না করে, তারাই জালিম।”
(সূরা আল-হুজুরাত: ১১)
এই আয়াতে স্পষ্টভাবে দেখা যায়, পরনিন্দার পাশাপাশি অপমান, উপহাস ও মন্দ নামে ডাকার বিষয়টিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাদিস
পরনিন্দার ভয়াবহতার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, নতুবা চুপ থাকে।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬০১৮)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, পরনিন্দা করার শাস্তি কতটা ভয়ংকর হতে পারে।
পরনিন্দার কারণসমূহ
পরনিন্দা সাধারণত কিছু অভ্যাস বা মানসিক দুর্বলতা থেকে আসে। এর মধ্যে রয়েছে:
পরনিন্দার ক্ষতিকর প্রভাব
কীভাবে পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা সম্ভব?
পরনিন্দার কিছু ব্যতিক্রম
ইসলামে কোনো বিষয়ে কাউকে সতর্ক করা বা উপদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অনুমতি রয়েছে। তবে এর উদ্দেশ্য হতে হবে সমাজ বা ব্যক্তির মঙ্গল। যেমন:
উপসংহার
পরনিন্দা একটি ভয়ানক কাজ যা ঈমানদারের জীবনে স্থান পাওয়া উচিত নয়। এটি মানুষের অন্তরে কলুষতা সৃষ্টি করে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ হয়। আমাদের প্রত্যেকের উচিত আল্লাহর ভয় মনে রেখে, নিজেকে শোধরানো এবং অন্যের দোষত্রুটি নিয়ে আলোচনা না করে বরং তাদের জন্য দোয়া করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরনিন্দা থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।