“رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَصْلِحْ لِي فِي ذُرِّيَّتِي إِنِّي تُبْتُ إِلَيْكَ وَإِنِّي مِنَ الْمُسْلِمِينَ”
অনুবাদ:-
“হে আমার প্রভু, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর এবং আমার পিতা-মাতার উপর যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য যেন আমি কৃতজ্ঞ হতে পারি, এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো। এবং আমার সন্তানদের মধ্যে তুমি যেন সংশোধন করে দাও। নিশ্চিতভাবে আমি তোমার কাছে তওবা করলাম, এবং নিশ্চিতভাবে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।” (সূরা আহকাফ: ১৫)
বিস্তারিত ব্যাখ্যা:
এই আয়াতটি একজন মুমিনের আন্তরিক প্রার্থনা প্রকাশ করে, যেখানে সে কৃতজ্ঞতা, সৎকর্ম এবং পারিবারিক কল্যাণ কামনা করছে। এখানে মূল অংশগুলো এবং তাদের গুরুত্ব:
১. আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা:-
“হে আমার প্রভু! আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর এবং আমার পিতা-মাতার উপর যে অনুগ্রহ করেছ তার জন্য যেন আমি কৃতজ্ঞ হতে পারি।”
– প্রার্থনাটি শুরু হয় আল্লাহর কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সামর্থ্য চাইবার মাধ্যমে। আল্লাহর অনুগ্রহকে স্বীকার করা কৃতজ্ঞতার প্রথম ধাপ। মুমিন তার নিজের এবং তার পিতা-মাতার উপর আল্লাহর অনুগ্রহকে স্বীকার করার চেষ্টা করছে, যা পারিবারিক কৃতজ্ঞতার গুরুত্ব তুলে ধরে।
২. সৎকর্ম:-
“এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি যা তুমি পছন্দ করো।”
– মুমিন আল্লাহর পছন্দের সৎকর্ম করার সামর্থ্য চাচ্ছে। এটি শুধু ভালো কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে না, বরং বিশেষভাবে সেই কাজগুলো করার ইচ্ছা প্রকাশ করে যা আল্লাহর অনুমোদিত।
৩. সন্তানের কল্যাণ:-
“এবং আমার সন্তানদের মধ্যে তুমি যেন সংশোধন করে দাও।”
– মুমিন তার সন্তানদের সৎকর্মের জন্য প্রার্থনা করছে। এটি একটি পবিত্র ও নৈতিক উত্তরাধিকার রেখে যাওয়ার গুরুত্বকে তুলে ধরে, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সৎকর্মের পথে চলে।
৪. তওবা ও সমর্পণ:-
“নিশ্চিতভাবে আমি তোমার কাছে তওবা করলাম, এবং নিশ্চিতভাবে আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত।”
– আয়াতটি তওবা ও সমর্পণের ঘোষণা দিয়ে শেষ হয়। তওবা (তাওবা) মানে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ফিরে আসা, এবং মুসলিম হিসেবে নিজের পরিচয় নিশ্চিত করা ঈমানী প্রতিজ্ঞাকে দৃঢ় করে।
পাঠ এবং প্রতিফলন:
১. বিস্তৃত কৃতজ্ঞতা:
– আল্লাহর অনুগ্রহ শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উপকারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা আমাদের পিতা-মাতার উপরেও প্রযোজ্য, যা গভীর কৃতজ্ঞতা ও বিনয়ের ভাবনা জাগায়।
২. সৎকর্মের ইচ্ছা:
– আল্লাহর অনুমোদিত সৎকর্ম করার ইচ্ছা মুমিনকে শুধুমাত্র ভালো কাজ করতেই নয়, বরং বিশেষভাবে সেই কাজগুলো করতে উৎসাহিত করে যা আল্লাহর অনুমোদিত।
৩. পরিবার ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম:
– সন্তানদের কল্যাণ ও সৎকর্মের জন্য প্রার্থনা পরিবারে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিক মূল্যবোধের গুরুত্ব তুলে ধরে।
৪. তওবা ও পুনর্নবীকরণ:
– নিয়মিত তওবা ও ঈমানের পুনর্নবীকরণ আধ্যাত্মিক অখণ্ডতা ও বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. বিশ্বজনীন বিশ্বাসের দৃষ্টিকোণ:
– এই প্রার্থনাটি একটি সম্পূর্ণ বিশ্বাসের দৃষ্টিকোণ প্রকাশ করে, যা কৃতজ্ঞতা, সৎকর্ম, পরিবারের কল্যাণ এবং অব্যাহত আধ্যাত্মিক পুনর্নবীকরণকে একত্রিত করে।
এই আয়াতটি আল্লাহর সঙ্গে মুসলিমদের সম্পর্কের মৌলিক উপাদানগুলির একটি শক্তিশালী স্মারক হিসেবে কাজ করে: কৃতজ্ঞতা, সৎকর্ম, পরিবারের কল্যাণ এবং তওবা। এটি মুমিনদের তাদের দৈনন্দিন জীবনে এই মূল্যবোধগুলো একত্রিত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে, একটি সুশৃঙ্খল ও ধার্মিক জীবনযাপনের নিশ্চয়তা দেয়।